মানসিক স্বাস্থ্য ফার্স্ট এইড: সংকটে থাকা একজনকে কীভাবে সহায়তা করবেন
কখনও কখনও একটি সহানুভূতিপূর্ণ শব্দ বা নিঃশব্দে পাশে থাকা — আপনার কল্পনার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য ফার্স্ট এইড (MHFA) মানে হচ্ছে বোঝা — কেউ মানসিকভাবে কষ্টে আছেন কি না — এবং সেই মুহূর্তে কী বলা উচিত, কী না বলা উচিত, এবং কীভাবে পাশে থাকা যায় তা জানা।
আপনাকে থেরাপিস্ট হতে হবে না। শুধু একজন সহানুভূতিশীল মানুষ হলেই চলবে, যিনি বুঝেন কীভাবে সাড়া দিতে হয়।

মানসিক স্বাস্থ্য ফার্স্ট এইড কী?
মানসিক স্বাস্থ্য ফার্স্ট এইড (MHFA) হল এমন একজন ব্যক্তিকে দেওয়া প্রাথমিক সহায়তা, যিনি মানসিক চাপ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা জরুরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন — পেশাদার সহায়তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত।
শারীরিক ফার্স্ট এইডের মতোই, এটি কোনও নির্ণয় বা চিকিৎসা নয় — বরং প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনা, সহানুভূতির সাথে শোনা এবং উপযুক্ত সহায়তার পথ দেখানো।
উদ্বেগ, বিষণ্নতা, আতঙ্ক, বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার মতো লক্ষণ দেখলে — MHFA আপনাকে সাহায্য করে শান্ত থেকে সঠিকভাবে পাশে থাকতে।
যে লক্ষণগুলো খেয়াল রাখতে হবে (তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)
তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক সংকটের লক্ষণ আলাদা হতে পারে, তবে উভয়ের মধ্যেই আচরণ, মেজাজ ও দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
তরুণদের মধ্যে লক্ষণ:
-
হঠাৎ বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া
-
পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া
-
খিটখিটে মেজাজ, অতিরিক্ত মুড সুইং
-
আত্মনাশের চিন্তা বা আঘাত করা
-
ঘুমের সমস্যা
-
বারবার "আমি কিছু পারি না" বা "আমার বাঁচতে ইচ্ছা করে না" বলা
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণ:
-
দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা বা উদ্বেগ
-
যেসব কাজে আনন্দ পেতেন তা থেকে আগ্রহ হারানো
-
অতিরিক্ত ক্লান্তি, খাওয়া-ঘুমে পরিবর্তন
-
একাগ্রতা কমে যাওয়া
-
মাদক বা অ্যালকোহলে নির্ভরতা বৃদ্ধি
উভয়ের ক্ষেত্রেই হঠাৎ অতিরিক্ত শান্ত হয়ে যাওয়া বা “আমি চলে গেলে কারও কিছু যাবে আসবে না” — এরকম মন্তব্যও হতে পারে বিপদের ইঙ্গিত।
কি বলবেন, আর কি বলা থেকে বিরত থাকবেন?
কারো মানসিক সমস্যা হলে, আপনি কী বলেন বা বলেন না — সেটার গভীর প্রভাব পড়ে।
যা বলা যায়:
-
“আমি তোমার পাশে আছি।”
-
“তোমাকে একা যেতে হবে না।”
-
“এভাবে অনুভব করা একদম ঠিক।”
-
“তোমার ওপর আমার আস্থা আছে, ধন্যবাদ ভাগ করে নেওয়ার জন্য।”
যা বলা উচিত নয়:
-
“এইসব ভুলে যাও।”
-
“তুমি অতিরিক্ত নাটক করছ।”
-
“অনেকের অবস্থা তোমার চেয়েও খারাপ।”
-
“এটা কিছুই না, ঠিক হয়ে যাবে।”
এইসব কথা কষ্টকে অবমূল্যায়ন করে। বরং শুধু উপস্থিত থাকা, মনোযোগ দিয়ে শোনা, আর সঙ্গ দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় সহায়তা।
কখন আপনি নিজে থেকে সরে আসবেন ও কাউকে রেফার করবেন?
সাহায্য করতে চাইলেও সব পরিস্থিতিতে আপনাকে নিজেই কিছু করতে হবে না।
যখন কেউ:
-
আত্মনাশের কথা বলছে
-
নিয়মিত বা ক্রমবর্ধমান সংকটে রয়েছে
-
আশপাশের জন্য বিপদজনক আচরণ করছে
-
বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে
এইসব পরিস্থিতিতে একজন প্রশিক্ষিত পেশাদার প্রয়োজন।
এমন পরিস্থিতিতে বলুন:
“আমি তোমাকে ভালো রাখতে চাই, আমাদের কারও সঙ্গে কথা বলা দরকার।”
একজন থেরাপিস্ট খুঁজতে সাহায্য করুন, হেল্পলাইন দিন, বা বিশ্বাসযোগ্য কারও কাছে নিয়ে যান।
সাহায্য করুন, কিন্তু সমাধান করতে হবে না
অনেকে ভাবেন, সাহায্য মানে সমস্যার সমাধান করা। আসলে, সঙ্গ দেওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এভাবে সহায়তা করুন:
-
ওদের অনুভূতি স্বীকার করে নিন
-
উপদেশ না দিয়ে আগে শুনুন
-
“তোমার পাশে আছি”, “আরও কথা বলতে চাও?” এরকম জিজ্ঞেস করুন
সোজা সমাধান না দিয়ে পাশে থাকুন — সেটাই অনেক সময় সবচেয়ে বড় সহায়তা।
মানসিক স্বাস্থ্য জরুরি পরিকল্পনা
কেউ যদি হঠাৎ আতঙ্কে পড়ে, আত্মহত্যার কথা ভাবে, বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে — তখন কী করবেন?
একটি জরুরি পরিকল্পনা থাকলে:
-
স্থানীয় হেল্পলাইনের নম্বর
-
কাকে ফোন করবেন
-
কিভাবে শান্ত করবেন (শ্বাস প্রশ্বাস, নিরাপদ স্থান)
-
কী লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে সাহায্য দরকার
এই পরিকল্পনা জীবনের বিপদের মুহূর্তে সাহায্য করতে পারে।
Create Your Own Website With Webador